স্রষ্টা যে ভাষায় কথা কহিলেন
জমায়েত সকল মানুষ একজন আরেকজনের দিকে তাকাইয়া প্রথম প্রথম কিছুই ঠাওর করিতে পারিলো না। অসীম শূণ্য ময়দান দেখিয়া সকলে শুধু ইহা বুঝিতো পারিলো যে, তাহারা আর ইহকালে নাই। ইহা এক কল্পনাতীত বিশাল প্রস্তর ময়দান - যাহাকে বিচারদিবস বলিয়া জানিতো। অগণিত সারি সারি লোক দেখিয়া উপস্থিত জনতা আশ্চর্য্য হইলো।
সনাতন ধর্মাবলম্বী সারির লোকেরা ভাবিতে লাগিলো, পরম ব্রহ্মা এই বুঝি পবিত্র সংস্কৃত ভাষায় কথোপকথন শুরু করিলো। মুসলিমরা নিশ্চিত হইয়াছিলো, আল্লাহ আরবিতেই কথা বলিবেন। তদ্রুপ মূসার অনুসারীরা হিব্রু ভাষা প্রত্যাশা করিতেছিলো। পরম স্রষ্টা যখন কথা কহিলেন তখন সকলে থ হইয়া রহিলো। এমন আশ্চর্য্যবোধ তাহারা মৃত্যুর সময় যমদূত-আযরাঈলকে দেখিয়াও করে নাই। তিনি না আরবিতে, না সংস্কৃতে, না হিব্রুতে, না গ্রিকে কথা কহিলেন। তিনি এমন ভাষায় কথা কহিলেন, যাহা শ্রবণ করিয়া নিরাশায় সকলে মূষড়িয়া পড়িলো।
কেহ বুঝিতে পারিলো না, স্রষ্টা কেন তাহাদের স্বগোত্রের ভাষায় কথা কহিলেন না। মুসলিমরা ভাবিল, আল্লাহ বোধহয় আরবি ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীদের ভাষায় কথা কহিলেন, আর সনাতনীরা ভাবিল, তাহাদের পরম ব্রহ্মা সংস্কৃত ব্যতীত অন্য ভাষা গ্রহণ করিয়াছেন। স্ব স্ব ধর্মকুল স্রষ্টার পরধর্মের ভাষাগ্রহণ দেখিয়া যখন মূর্ছা যাইবার উপক্রম, তখন ঐশ্বরিক আলোকে তাহাদের বোধোদয় হইলো — পরম স্রষ্টা যাহা কহিলেন, তাহা সে কী করিয়া বুঝিয়া উঠিলো, যেহেতু এই ভাষা পূর্বে কোথাও শিখে নাই!