আসল নীড়ে ফেরার গল্প
প্রতিটা দিন আর রাত আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের জীবনটা কত ক্ষুদ্র। দিনের শুরু হয় ভোরের শিশিরে। চারদিকটা যেনো ধীরে ধীরে জাগতে শুরু করে। পাখিদের কলরব, সূর্যের উঁকি - সবকিছুই দিনের উত্থানের আহ্বান করে। পৃথিবী জেগে উঠে। আমরা ব্যস্ত হয়ে যাই যে যার কর্মে। আমাদের কর্মচঞ্চলতা বাড়তে থাকে, বিকেল না গড়াতেই আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই, ঠিক সূর্যটার মত। শেষ বিকেলে গোধূলীর আভা আসল নীড়ে ফেরার সংকেত দেয়। পাখিরা তাদের নীড়ে ফেরে; মানুষও ফেরে। কিন্তু এ ফেরাও যেন ঠিক নীড়ে ফেরা নয়। তাই এসময়টাতে কেউ কোনো কাজে খুব মগ্ন না থাকলে, সবারই (সম্ভবত) অচেনা এক অস্থিরতার সৃষ্টি করে। না ঘরে, না বাইরে - কোথাও যেন ঠিক শান্তি পাওয়া যায় না। মানুষ বুঝে উঠতে পারে না, এসময়টা কী করলে ভালো লাগবে!
ভালো লাগানোর জন্য এই প্রয়াস এক সান্ত্বনা-ই। কিসের সান্ত্বনা? আসল নীড়ে ফেরার। এই নীড় মানুষের আসল নীড় নয়, আমাদের যেতে হবে বহুদূর। দিনের শেষটা তাই প্রতিদিন আমাদের সেই বার্তায় দিয়ে যায়।
দিনের শেষে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যার পর জগতজুড়ে নেমে আসে রাত, যেটাকে মহান আল্লাহ ঘুম পাড়ানোর চাঁদর বা আচ্ছাদনের সাথে তুলনা করেছেন [সূরা ফোরকান, ৪৭ নং আয়াত দ্রষ্টব্য]। রাত মানেই যেনো বিদায়ের আয়োজন। আমাদের দেহ বিদায় নেয় ব্যস্তময় দিন থেকে আর আত্মা বিদায় নেয় সেই ক্লান্ত দেহ থেকে।
প্রতিরাতে আমাদের ঘুমের সাথে সাথে আমাদের আত্মা (রুহ) দেহ ত্যাগ করে, সে বিচরণ করে তার আপন রাজত্বে। তাই বলতে গেলে আমরা প্রতিদিনই মৃত্যুবরণ করি। আবার রাতশেষে নতুন করে জন্ম হয় আমাদের [সূরা আল আনআম, ৬০ নং আয়াত দ্রষ্টব্য]। এরই মাঝে হয়তো অনেকের আর দ্বিতীয়বার জেগে উঠা হয় না। জানি না, এজন্যই কি অধিকাংশ মৃত্যুগুলো রাতেই হয়!
না জানি আমাদের অলখে রাতগুলোতে আত্মার সাথে দেহের কতটা যুদ্ধ হয়, কতটা তর্কবিতর্ক হয়! তাদের হিসেব-নিকেশ নিয়ে ভাবার জন্য আমাদের বস্তুবাদী সভ্যতায় গুরুত্ব বা সময়ই কই!
গ্রহের পরিভ্রমণের ন্যায় দিন যাচ্ছে, রাত যাচ্ছে আর আমাদের টাইমলাইন এগুচ্ছে আপন নীড়ে ফেরার সীমানায়। সেদিন দাগে দাগ মিলে যাবে আর সময়ের কাঁটার সাথে কাঁটা। সে আমরা যতই অস্বীকার করি, যতই এই পৃথিবীর মোহে থাকি না কেনো।